Wednesday, April 29, 2020

রাত-দিনে ছয়বার রূপ বদলায় সুন্দরবন!!

 File Photo:সুন্দরবন

রাত-দিনে ছয়বার রূপ বদলায় ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবন। বন জীববৈচিত্র্যের অন্যতম বৃহত্তম আধারের পরিচিতি পেয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের প্রাণ-প্রকৃতি দেখতে প্রতিদিনই ছুটে আসেন দেশ-বিদেশের শত শত পর্যটক। গত ২৬ মার্চ গোটা সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব ধরনের পর্যটকসহ জেলে-বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সর্বোচ্চ সতর্কতারেড অ্যালার্ডজারি করে বন অধিদফতর। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ থাকায় সুন্দরবনে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ট্যুর অপারেটর ছোট-বড় নৌযান মালিক-শ্রমিকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বাংলাদেশ অংশের ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটারে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনটি সমুদ্রের লবণাক্ত জোয়ারের পানিতে ২৪ ঘণ্টায় দুবার প্লাবিত হয়ে থাকে। ১৯৯২ সালে সমগ্র সুন্দরবনের জলভাগকে রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। সংরক্ষিত বনের তিনটি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড ঘোষণা করে; যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩০ ভাগ এলাকা। সুন্দরী, গেওয়া, গরান, পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদরাজি রয়েছে। ছাড়া ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার হরিণসহ ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, লোনা পানির কুমির, গুইসাপ, কচ্ছপ, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন, অজগর, কিংকোবরাসহ ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ ৩১৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে। তাই সুন্দরবনের এসব জীববৈচিত্র্য দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটন পিপাসু মানুষের আগ্রহের শেষ নেই।  সুন্দরবনে বছরজুড়েই ইকোট্যুরিস্টরা আসেন। ফলে সারা বছরই বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের লোকলয় সন্নিহিত করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে, শরণখোলা রেঞ্জ অফিস সাতক্ষীরার কলাগাছিয়া পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় থাকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। তবে সুন্দরবনে পর্যটনের ভরা মৌসুম হচ্ছে মধ্য অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তিনটি কেন্দ্র ছাড়াও হারবাড়ীয়া, কটকা কচিখালী, হিরণ পয়েন্টে দুবলার চর পর্যটন এলাকায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত থাকে। বন বিভাগের নিবন্ধিত ৬০টি ট্যুর অপারেটর কোম্পানি আধুনিক নৌযানে করে সুন্দরবনে দেশি বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণের ব্যবস্থা করে থাকে। লোকালয় সন্নিহিত করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে, শরণখোলা রেঞ্জ অফিস সাতক্ষীরার কলাগাছিয়া পর্যটন কেন্দ্রে ছোট ছোট জালিবোট বা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে সারা বছর পর্যটকরা আসা-যাওয়া করে থাকেন। করোনার কারণে পর্যটন বন্ধ থাকায় সুন্দরবনে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ট্যুর অপারেটর ছোট-বড় নৌযান মালিক-শ্রমিকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন ট্যুরিস্ট ক্লাবের নির্বাহী আবদুল্লাহ বনি। সুন্দরবনের পর্যটনশিল্পে জড়িত প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ এখন বেকার। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, পর্যটন মৌসুমে তার পর্যটন কেন্দ্রটিতে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক এসে থাকে। কেন্দ্র লোকালয় সন্নিহিত হওয়ায় অফ সিজনে গড়ে প্রতিদিন ভ্রমণ করতে আসেন ২০০ পর্যটক। দিনে জনপ্রতি দেশি পর্যটক ২৩ টাকা বিদেশি পর্যটক ৩৪৫ টাকা রাজস্ব দিয়ে কেন্দ্রটি বন্যপ্রাণীসহ সুন্দরবনের প্রাণ প্রকৃতি দেখতে পারেন। বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, প্রতি বছর গড়ে দুই লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করে থাকে। গত ২৬ মার্চ গোটা সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব ধরনের পর্যটকসহ জেলে-বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সর্বোচ্চ সতর্কতারেড অ্যালার্ডজারির পর অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট প্যাট্রোলিংসহ সব ধরনের পাহারা জোরদার করা হয়েছে।


Sunday, April 26, 2020

"Corona's victims cross 200,000, the death toll is getting longer in the world”



The whole world in Corona-Grass. Despite various restrictions, social distances, and lockdowns, almost every country in the world is still being infected by the coronavirus. The number of victims is increasing by leaps and bounds. The death toll from the virus crossed 200,000 worldwide at midnight Bangladesh time on Saturday.The first novel coronavirus infection began late last year in the city of Wuhan in China's Hubei province. From February, the whole world started to see the transmission speed of Kovid-19. According to the World Health Organization (WHO), coronavirus has spread to 185 of the world's 195 countries. From America to India, from Russia to Brazil, from Iran to Italy the infection has spread to all parts of the world. And every moment coronary infections and prey are increasing at a rapid pace. The death toll from Corona worldwide on February 10 was 1,018. Thirty-seven days later, on March 19, the death toll dropped to 10,000. After that, it took only 14 days for the virus to cross the range of 10,000 to 50,000. The death toll rose to 51,118 on April 2. In the next 7 days it went to 1,00000 . From 1,00000  to 1,50,000  quotas in just 7 days. After that it took 7 days to pay 2,00000. In other words, it took 36 days from 1 thousand to 10 thousand deaths in the world. In the next 36 days, the total number of deaths from the virus exceeded 2,00000. For the time being, this virus, which is not vaccinated, is constantly gaining momentum in this way. The victims of Covid-19 are the most in America. At the time of publication of this report, the total number of infected people in that country was approaching one million, according to Johns Hopkins University. The death toll is reaching 54,000. The death toll in New York City alone is close to 18,000. From Spain to Italy, from France to Germany, from Britain to Belgium  the Corona is everywhere. Of the 223,000 victims in Spain, about 23,000 have already died. About 200,000 infected in Italy, over 26 thousand dead. In France, more than 22,000 people died out of 1,62,067 infected. Infection in Britain is close to 1,50000. The death toll is around 21,000.  The situation in India is not like that in Europe and America, the number of daily attacks here is on the rise. As of Sunday morning, April 26, 2020, this number has exceeded 26,000. More than 800 deaths. But in Bangladesh total 145 dead and 5416 people are affected by the Coronavirus till today.
So far, the rate of infection in this country has not increased as fast as in the West. But if that happens, there is no doubt that it will pose a major threat to the country's relatively poor medical infrastructure.84000 people affected in China where 4 thousand 636 people have died. However, the Chinese government has been accused of underestimating the number of victims and deaths.
Apart from China, countries like Turkey or Iran have been the worst hit by the corona in the Asian region. The number of victims in Turkey is around 108000. The virus has been found in about 90,000 people in Iran. The death toll in Turkey has risen to 2,700. In Iran, on the other hand, 5,650 people died.
Such a terrible time has not come in the recent past all over the world. Spanish flu at the end of the second decade of the last century, Asian flu at the end of the sixties, millions of people died in countries around the world. Since then, the world has seen the spread of swine flu, Ebola and Zika virus in the current century. But none of these three have left the world in a state like Coronas.
Corona is not the only one who has a hand in the human body. The world economy has also started to be bloody in its hands. Lockdown is going on in almost all the countries of the world to deal with corona-infection. The economic development of the whole world has been affected by this.
According to the IMF, among the developed countries of the world, the rate of GDP growth in the United States may move at a negative rate. According to the agency, it will be -5.9 percent. They also feared that global economic growth would slow to 3 percent.
According to the World Bank, the South Asian region is heading for the worst in 40 years. Bangladesh is not at ease either. The rate of economic growth in this country began to decline long before Corona. In the meantime, Corona and the lockdown have hit the economy. According to various financial studies, the country's growth rate will hover between 1.5 percent and 2.6 percent this year.

Written and Edited by 
Md Zahirul Haque
AI News Correspondent (USA) & Freelance Journalist

REF: Different news articles

'Corona spreads from Europe to US'

 Andrew Cuomo


New York Governor Andrew Cuomo has accused the United States of spreading coronavirus infection from Europe, not China. He said President Donald Trump's travel ban order to prevent corona infection came much later, in the meantime corona has spread to the United States. The governor of New York, the state most affected by the coronavirus, said the front door was closed just by initially controlling travel with China. However, the back door was left open. When the sensation is found, it is too late. Now we have to see so that it does not happen again. Andrew Cuomo said 1,300 flights from Europe arrived at New York and New Jersey airports between January and March. There were about 22, 00000 passengers in these flights. They are now thought to have caused widespread coronavirus infections in the United States. The death toll from the deadly coronavirus has skyrocketed in the United States. The death toll from the Kavid-19 epidemic in the country has doubled in the last 10 days. So far, 9,25,038 people have been infected with the coronavirus in the United States, according to the World Survey. In the last 24 hours, 38,764 people have been infected. News from NDTV. So far 52,185 people have died.

This number of deaths is only of patients who died in the hospital. Many are dying of illness at home. The death toll in the United States is much higher. 1,954 people have died in the last 24 hours. On average, more than 2,000 people have died in the United States over the past 10 days. As a result, the number of deaths has jumped from 25,000 to 52,000 in just 10 days. Forty percent of the people in the country have died in Corona in New York. It is followed by New Jersey, Michigan, California and Massachusetts. Not as many Americans died of the coronavirus in the Korean War. The war, which lasted from 1950 to 1953, killed 36,516 Americans. The deadly coronavirus has been running around the world for the past four months. Although the Chinese industrial city of Wuhan is said to be the source of the epidemic, its prevalence is now highest in Europe and America. Al Arabiya.
Edited by Md Zahirul Haque
AI News Correspondent(USA) & Freelance Journalist

Tuesday, April 21, 2020

শুধু লাশ গোনা চলছে, নিউইয়র্ক সিটি যেন মৃত্যুপুরী

এলমহার্স্ট হাসপাতালের বাইরে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী টেন্ট
নিউইয়র্ক মানেই ছিল একসময় স্ট্যাচু অব লিবার্টি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, টাইমস স্কয়ার, রকফেলার সেন্টার, সেন্ট্রাল পার্ক, অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং, ব্রুকলিন ব্রিজ, মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম, জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়। এর কোনও একটি বাদ পড়লেও বাঙালিদের চলে। কিন্তু তাদের কাছে জ্যাকসন হাইট্সের নাম বাদ পড়লে নিউইয়র্কের পরিচয় যেন পূর্ণ হয় না। জ্যাকসন হাইট্সকে নিউ ইয়র্ক নগরীর বাঙালিদের তীর্থস্থান বললেও ভুল হবে না। বলা যেতে পারে, জ্যাকসন হাইট্সের গুরুত্ব তাঁদের কাছে তার চেয়েও বেশি। মহাকাশের যাত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভুত কল্পনা চাওলার নামানুসারে ৭৪ স্ট্রিট এবং ৩৭ অ্যাভিনিউ-এর নামকরণ হয় কল্পনা চাওলা ওয়ে। এই জ্যাকসন হাইট্সকে ঘিরে বাংলাদেশি, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও নেপালিদের এক বিশাল বাজার। শাড়ি-গহনা-রেশমি চুড়ি থেকে পাটা-পুতা— কী নেই সেখানে! একটা সময় ছিল যখন ৭৪ স্ট্রিটকেই জ্যাকসন হাইট্স বলা হতো।
অভিবাসী গ্রিকদের কাছ থেকে নিয়ে ৭০ দশকে ভারতীয় ও পাকিস্তনিরা ওই এলাকায় ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন। এখন ৭২, ৭৩, ৭৪ ও ৭৫ স্ট্রিট জুড়েই বাঙালিদের রাজত্ব। ৯০ দশকের শুরুতে ওপি ওয়ান ও ডাইভারসিটি ভিসায় আগত বাংলাদেশি অভিবাসীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে এখন ৩ লক্ষের উপরে। বাঙালিদের কোন খাবার নেই জ্যাকসন হাইট্সে? ইত্যাদি, প্রিমিয়াম, জ্যাকসন ডিনার, হাটবাজার, খাবার বাড়ি, কাবাব কিং, ডেরা রেস্টুরেন্ট, রাজভোগ, ইন্ডয়ান তাজ, প্রিন্স, সাগর চায়নিজ— এই সব নাম প্রতিটি বাঙালি অভিবাসীর কাছে পরিচিত।  সরিষা ইলিশ, গলদা চিংড়ি আর মাছের পাতুড়ি-সহ অসংখ্য বাঙালি খাবার এসব দোকানে পাওয়া যায়।  তাই পৃথিবীর যে কোনও জায়গা থেকে বাঙালি নিউইয়র্কে ভ্রমণে আসুক না কেন, তাঁদের একবার জ্যাকসন হাইটসে আসা চাইই। তার মধ্যে বছর খানেক হলো নিউইয়র্ক সিটি যোগ করেছে ৭৪ স্ট্রিট, ৩৭ রোড ও ব্রডওয়ের মাঝে একটি নয়নাভিরাম প্লাজা। সে প্লাজায় মানুষে গিজ গিজ করে সর্বক্ষণ। 
শত শত বাঙালির কলরবে মুখর জ্যাকসন হাইটস এখন করোনায় আক্রান্ত। পুরো জ্যাকসন হাইটস যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। কোনও লোক-জন নেই।  রেস্তোরাঁ, দোকানপাট— সব বন্ধ। প্যাটেল ব্রাদার্স আর সবজিমান্ডি খোলা ছিল-জনসাধারণের নিত্যনৈমত্তিক বাজারের জন্য। সেই দুটি বিশাল স্টোরও গত ৭দিন ধরে বন্ধ। শুধু শোনা যায় অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের আওয়াজ। কেননা দুই ব্লক দূরেই রয়েছে এলমহার্স্ট হাসপাতাল। সেই হাসপাতাল এখন মৃত্যুর খোঁয়াড়। সংকুলান হচ্ছে না স্থানের।   তাই গেটের সামনে তাঁবু খাটিয়ে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা চলছে।  প্রতিদিনই শ’খানেক করোনা রোগী মারা যাচ্ছে এই হাসপাতালে। হাসপাতালের সামনেই সারি সারি লাশ। সামনে ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে সর্বক্ষণ। লাশ উঠছে আর উঠছে। আমেরিকার মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমগুলোর কর্মীরা প্রায় সারাদিনই এই হাসপাতালটির সামনে রয়েছেন। অদ্ভুত এক ভয়ংকর স্থানে পরিণত হয়েছে জায়গাটি। আশে-পাশের অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভয়ে জানালা পর্যন্ত খুলছে না। আরোগ্য লাভের আশা নিয়ে পরিবারের সদস্যকে গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত। অনেকের ক্ষেত্রে সেটাই শেষ দেখা। এরপর শুধু একটি নম্বর। আবার সে নম্বরটি ধরে মরদেহ খুঁজতে হবে। তার জন্য আবার অপেক্ষা। কারো কারো ক্ষেত্রে এক থেকে দুদিন দেরি হচ্ছে মরদেহ পেতে। শেষ দেখাটি দেখারও সুযোগ নেই।   পুরো শরীর সিল করা। যাদের আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, তাঁদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে। নতুবা সিটি গণকবরে সমাহিত করছে হাজার হাজার লাশ। শুধু এলমহাস্ট হাসপাতাল নয় নিউইয়র্ক নগরীর জ্যামাইকার কুইন্স হাসপাতাল, ব্রুকলিনের কনি আইল্যান্ড হাসপাতাল, ফ্ল্যাশিং হাসপাতাল ও ম্যানহাটানের বেলভিউসহ সব হাসপাতালের একই চিত্র।  
নিউইয়র্ক বাংলাদেশ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট কামাল আহমেদ থেকে শুরু করে চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিক, ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে প্রায় শতাধিক বাঙালি মারণব্যাধি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণ হারিয়েছেন। এর অধিকাংশই নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশের বাঙালি। এ নিয়ে ৩ জন পশ্চিম বাংলার বাঙালি ও ১৮ জন ভারতীয় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বলে কমিউনিটির পত্র-পত্রিকার খবর। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই একজন বাঙালির মৃত্যুর খবর আসছে। মৃত্যুর তালিকায় রয়েছেন ১৮ বছর থেকে ৭০ বছর। করোনার হাত থেকে নিউইয়র্কে কেউই নিস্তার পাচ্ছেন না। করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের কর্মীরাই কাজ করে যাচ্ছেন। ওঁদের জন্যও বরাদ্দ নেই টেস্ট কিট। সাধারণ ফ্লুতে যে ধরনের পিপিই দেওয়া হতো, অনেক ক্ষেত্রেই এখন সেটাও নেই। সিক (ছুটি) কল দেবার তেমন সুযোগ নেই। দিবা-রাত্রি কাজ করছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। 
এর মধ্যে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে নিউইয়র্কে ২ জন বাঙালি চিকিৎসক চলে গেলেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে।  নিজের জীবন দান করে গেলেন করোনা রোগীদের বাঁচাতে গিয়ে। তাঁদের একজন হলেন মোহম্মদ ইফতেখার উদ্দিন। ৬ এপ্রিল নিউইয়র্কের  নর্থ সেন্ট্রাল ব্রঙ্কস হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার ৫ম দিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি নিউইয়র্কের ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ-এর এপিডেমোলজিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। 
চিকিৎসক রেজা চৌধুরির মৃত্যু আরও নির্মম। ঘটেছে গত ৮ এপ্রিল রাত ১১টা ৩০ মিনিটে নিউইয়র্কের লাং আইল্যান্ডে অবস্থিত নর্থশোর হাসপাতালে। হাসপাতালে যাওয়ার ৫ দিন আগেও রোগীদের চিকিৎসা করছিলেন।  তাঁর মৃত্যুতে নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসের বাঙালি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। এভাবে দুইজন চিকিৎসককে হারাল নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটি। যারা দিন নেই রাত নেই ৪ সপ্তাহ ধরে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করে গেছেন। তাঁরাই এক এক করে এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চলে যাচ্ছেন।  আরো কত বাঙালি চিকিৎসক যে আইসিইউ-তে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তার হিসেব নেই।
বহু জানা-অজানা বাঙালি চিকিৎসক শুধু নিউইয়র্ক নয়, রোগী সামলাচ্ছেন পুরো আমেরিকায়।   ডেট্রয়েট, বস্টন, নিউ জার্সি, লস এঞ্জেলেস, বাল্টিমোর, ওয়াশিংটন, আটলান্টা, টেনেসি-সহ আমেরিকার বেশিরভাগ স্টেটেই বাঙালি চিকিৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবতার সেবায় নিয়োজিত। প্রত্যেকেই আমেরিকার মূলধারায় রাখছেন তাদের নিজেদের অবদান। এটি বাঙালি হিসেবে অনেক গর্বের। এই গর্বের মানুষগুলো এক এক করে বিদায় নিচ্ছেন।  
বহু জাতিগোষ্ঠীর নিউইয়র্কে প্রতিদিন কোনও না কোন বাঙালির মৃত্যুর খবর আসছে। অভিবাসী সমাজের মধ্যে বাংলাদেশি বাঙালিরাই বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় এত বাংলাদেশি বাঙালির আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশি অভিবাসীদের করে তুলেছে আতঙ্কগ্রস্ত। শুরুর দিকে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন ক্যাব চালাতে গিয়ে। নগদ অর্থের লেনদেন থেকে আক্রান্ত কোনও যাত্রীর সংস্পর্শে এসে। ভাইরাসের প্রথম আক্রমণের শিকার বাংলাদেশি কর্মজীবীদের মাধ্যমে তাদের পরিবারের লোকজন আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। প্রবাসেও আমাদের অনেক পরিবারই একান্নবর্তী। অনেকেই একই বাসায় সন্তান, মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে থাকেন। আবার অনেক ব্যাচেলর গাদাগাদি করে থাকেন এক সাথে।   চলমান সঙ্কটে এ বিষয়টিকেও বাংলাদেশিদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার একটা কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। লকডাউন শুরু হওয়ার পর নিজেদের ঘরে অনেকের পক্ষে পৃথক থাকা সম্ভব হয়নি। অনেক লোকজনের বাস এক ঘরে। রান্নাঘর থেকে বাথরুম তাঁদের শেয়ার করতে হয়। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি প্রায় তিন শতাধিক চিকিৎসক-সহ পাঁচ শতাধিক স্বাস্থ্যসেবী (নার্স, ইএমএস) সামনের সারির কর্মজীবী। তাঁরাও আক্রান্ত হয়েছেন এক এক করে। নিউইয়র্কের পুলিশে, ট্রাফিকে কাজ করা বাংলাদেশিরাও করোনার প্রথম ধাপের আক্রমণের শিকার। 
নিউইয়র্ক সিটির হাসপাতালগুলো এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর অভিবাসী সমাজের ছিল ব্যাপক আস্থা।  অনেক বাঙালিই মনে করতেন, ৯১১ কল করে অ্যাম্বু্লেন্স পৌঁছাতে পারা মানে বেঁচে যাওয়া। এবার হৃদরোগ থেকে শুরু করে যত কঠিন রোগই হোক না কেন, নিরাময় হয়েই ফিরতেন বেশিরভাগ রোগী। নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলো যে কতটা অরক্ষিত রয়েছে, তা এ বার করোনা ভাইরাস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমাদের এক বন্ধুর অবস্থা খুব খারাপ। থাকেন উডসাইডে। তাঁর স্ত্রী ৯১১ কল করলে অ্যাম্বুলেন্স এসে নিয়ে গিয়েছে। জ্বর কমার জন্য টাইলানল দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। এবার রোগী বাড়ি ফিরলেন নিজ দায়িত্বে। ৩ দিন পর করোনা টেস্টের রেজাল্ট জানলেন— পজেটিভ। ফোনে বলেছেন শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্ট হলেই হাসপাতালে যেতে। মৃত্যুর কাছাকাছি না পৌঁছানো পর্যন্ত টেস্ট কিংবা ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।
এটি আরো প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্নর এন্ড্রু কু্মো নিউইয়র্ক সিটির মেয়র ব্লাজিওর মতদ্বৈততা। ডেমোক্রেটিক পার্টির এই দুই নেতার বিরোধ অনেকদিন ধরেই চলছিল। লক ডাউন থেকে শুরু করে স্কুল ছুটি-সহ কোনও কিছুতেই তাঁদের ঐকমত্য ছিল না। মানুষের জীবন-মরণ প্রশ্নেও তাঁদের এই বিরোধের নিষ্পত্তি হয়নি। নিউইয়র্কের এই করুণ অবস্থার জন্য এটাও অনেকাংশে দায়ী। তাছাড়া আরেকটি বিষয় এখন স্পষ্ট যে, নিউইয়র্ক সিটি বা স্টেট কখনোই ভাবেনি একসঙ্গে দেড় লক্ষ রোগীকে তাদের সামলাতে হবে।  
আসলে নিউইয়র্কের মেয়র বা গভর্নর কেন, স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্টই করোনার ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারেননি। উহান-এ ডিসেম্বরের শুরুর দিকে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার পর ৩ মাস সময় পেলেও আমেরিকা কোন প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উহান বা চিন থেকে যারাই আমেরিকায় এসেছেন, তাঁদের যে কোয়রান্টিন করার প্রয়োজন রয়েছে, সে বিষয়টিই প্রশাসন ভাবেনি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেদিনও বলেছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তার মাশুল দিতে হচ্ছে এখন আমেরিকার জনগণকে। নিউইয়র্কের প্রতি প্রত্যেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টেরই এক ধরনের ক্ষোভ থাকে। কেননা ইমিগ্র্যন্ট আধিক্যের এই স্টেটটিতে কখনোই রিপাবলিকানরা জয়ী হতে পারেন না। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এবং দুই ডেমোক্রেট নেতার অন্তর্দ্বন্দ্ব নিউইয়র্ককে মৃত্যু নগরী বানিয়ে দিয়েছে।    
বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম দেশ, যেখানে এক দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছে। গত ১১ এপ্রিল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র  মৃত্যু সংখ্যায়ও পৃথিবীর সকল দেশকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।  গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ২ হাজার ১০৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার। নিউইয়র্কের পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছে নিউজার্সি। নিউইয়র্ক-নিউজার্সি মাঝখানে শুধু একটি টানেল। নিউজার্সির অনেকেই নিউইয়র্কে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে প্রতিদিন যাতায়ত করেন। তাই নিউজার্সির মৃ্ত্যুর সংখ্যা প্রায় দু’হাজারেরও বেশি। ৫০ হাজারের উপরে রয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই শহরের দুজন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির করেনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। আরেকজন মারা গিয়েছেন মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরে।  
শুধু নিউইয়র্কেই মারা গিয়েছেন প্রায় ৯ হাজার। আরও প্রায় ২০ হাজারের অধিক রয়েছেন হসাপাতালের নিবিড় পরিচর্যায়।  নিউইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু কু্মো করোনাভাইরাসে নিহতদের স্মরণে নিউইয়র্কের পতাকা অর্ধনমিত রাখার ঘোষণা করেছিলেন। নিউইয়র্কের ক্যাপিটাল হিল আলবেনি-সহ সর্বত্র পতাকা অর্ধনমিত রয়েছে। কিন্তু কোনওভাবেই নিউইয়র্কের মৃত্যুর রাশ টানা যাচ্ছে না। আজও নিউইয়র্কে মৃতের সংখ্যা প্রায় সহস্রাধিক। নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা গত তিন দিন ধরে কিছুটা কমছে। যেখানে আগে ছিল প্রতিদিন ২০ হাজারের উপরে। এখন পনের হাজারের নীচে। এটিই একমাত্র আশার কথা। কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা এখনো কমেনি। প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ রয়েছেই।
নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের শুশ্রূষায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও নার্সদের অবস্থা কতটা করুণ, তা ফেসবুকের বিভিন্ন স্টেটাসেই স্পষ্ট। হাসপাতালগুলোর ভলান্টিয়ার সার্ভিসগুলো বিজ্ঞাপন দিয়ে সংগ্রহ করছে নানান সরঞ্জামাদি। মাস্ক, গ্লাভস, প্রটেক্টিভ হেড শিল্ড বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা তৈরি করে ডোনেট করছে হাসপাতালগুলোতে। উহানে পুরো শরীরকে রক্ষা করার জন্য চায়না যে গাউন ব্যবহার করেছে, আজ পর্যন্ত আমেরিকার কোন হাসপাতালে এটি চোখে পড়েনি। প্রশ্ন উঠেছে আমেরিকার করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যর্থতার পাশাপাশি সুরক্ষাকারীদের রক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই।  
তবে অন্ধকারের মধ্যে একমাত্র আশার আলো নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমছে। সেই আশায় নিউইয়র্ক তথা আমেরিকাবাসী কোয়রান্টিনে বসে দিন গুনছেন।
Written and Edited By
Md Zahirul Haque,AI News Correspondent(USA) and Freelance Journalist

***REF: Different News Articles

Friday, April 17, 2020

সংক্রমণের পাঁচ মাস পরে করোনা নিয়ে আমরা কী কী জানলাম


করোনাভাইরাস বেশ কয়েক বছর ধরেই সভ্যতার নানা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক ধরনের করোনাভাইরাসের জন্য আমাদের কফের কষ্টে ভুগতে হয়। তবে দু’ধরনের করোনাভাইরাস গত কয়েক বছরে আমাদের পক্ষে রীতিমতো ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ, সেগুলি প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। এদের একটি- ‘সার্স’। অন্যটি ‘মার্স’। কিন্তু তারাও কোভিড-১৯ ভাইরাসের মতো সভ্যতার পক্ষে এতটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারেনি। গত ৫ মাসেই এই ভাইরাসের জন্য বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২১,৮৪,৫৬৬ মানুষ। মৃতের সংখ্যা ১,৪৬,৮৯৭ ।
মাত্র ৫ মাস আগে আমরা প্রথম জানতে পারি কোভিড-১৯ ভাইরাসের কথা। আর তার পর থেকেই বিশ্ব জুড়ে এই ভাইরাসকে নিয়ে শুরু হয়েছে গবেষণা। তাকে চিনে, বুঝে ওঠার জন্য। তার ভয়াবহ সংক্রমণ রুখতে ওষুধ ও টিকা আবিষ্কারের জন্য।
দেখে নেওয়া যাক, গত ৫ মাসে কোভিড-১৯ ভাইরাস সম্পর্কে আমরা কী কী জানতে পেরেছি? ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছে।
১) এরা কোথা থেকে এসেছে? কী ভাবে মানুষকে সংক্রমিত করল?
এদের উৎপত্তি বাদুরদের মধ্যে। গবেষকরা দেখেছেন, বাদুড় আর কোভিড-১৯-এর হানাদারিতে মরে না। কারণ, তাদের শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা এই ভাইরাসকে অনায়াসে রুখে দিতে পারে। তার ফলে, বাদুড়ের শরীরে এরা আরও দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। যাতে তারা বাদুড়ের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে পারে। তাই বাদুড়ের শরীর এখন ভরে উঠছে খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটাতে পারে এমন কোভিড-১৯ ভাইরাসে। তার ফলে বাদুড় থেকে যদি এই ভাইরাস অন্য স্তন্যপায়ীদের শরীরে ঢোকে, যাদের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল, তা হলে সেখানে তারা আরও দ্রুত হারে বংশবৃদ্ধি ঘটাতে পারে। বহু প্রমাণ মিলেছে, বাদুড় থেকে মানুষের শরীরে ঢোকার আগে কোভিড-১৯ প্যাঙ্গোলিনের মতো স্তন্যপায়ীর দেহে ঢোকে।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভাইরোলজিস্ট এডওয়ার্ড হোমস বলছেন, ‘‘কোভিড-১৯ বাদুর থেকে অন্য কোনও প্রাণীর দেহে ঢুকেছিল। যে প্রাণী প্রজাতিগত ভাবে মানুষের খুব কাছাকাছি। তাদের হয়তো বাজারেও পাওয়া যায়। ফলে বাজারে আমরা সেই প্রাণীর সংস্পর্শে আসায় আমরাও সংক্রমিত হয়েছি। তার পর বাড়িতে ফিরে গিয়ে আমরা অন্যদের সংক্রমিত করেছি।’’
দেখা গিয়েছে, কেউ হাঁচলে বা কাশলে নাক দিয়ে জলের কণা (‘ড্রপলেটস’) বেরিয়ে আসে তাতেই থাকে কোভিড-১৯ ভাইরাস।
২) এই ভাইরাস কী ভাবে ছড়ায়? তাতে মানুষ কী ভাবে সংক্রমিত হয়?
শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে এই ভাইরাস আটকে থাকা কণাগুলি আমাদের দেহে ঢোকে। আর তা আমাদের গলা ও ল্যারিঙ্গসের বাইরের দিকের কোষগুলির গায়ে আটকে থাকে। এই কোষগুলির বাইরের দিকে থাকে প্রচুর পরিমাণে রিসেপ্টর কোষ। যাদের নাম ‘এসি-টু রিসেপ্টর্স’। এই রিসেপ্টরগুলি কোনও রাসায়নিককে বাইরে থেকে কোষের মধ্যে ঢুকতে সাহায্য করে। আর সেই রাসায়নিক ঢোকার বার্তা অন্য কোষগুলিকেও জানিয়ে দিতে পারে।
নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভাইরোলজিস্ট জোনাথন বল বলছেন, ‘‘কোভিড-১৯ ভাইরাসের পৃষ্ঠতলে (সারফেস) থাকে এক ধরনের প্রোটিন। যার মাধ্যমে কোষের রিসেপ্টরগুলিকে ধোঁকা দিয়ে ভাইরাস তারা আরএনএ-কে কোষের ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে পারে। দেহে প্রতিরোধী কোষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ানোর জন্য আমাদের কোষের কিছু কলাকৌশল আছে। ভাইরাসের আরএনএ-গুলি আমাদের কোষে ঢোকার পর সেই কলাকৌশলগুলি নিয়েই কোষের মধ্যে কোভিড-১৯ ভাইরাসের দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটায়। তাতে কোষের মধ্যে ভাইরাসের সংখ্যা এতটাই বেড়ে যায় যে কোষের প্রাচীর ফেটে যায়। তখন সেই ভাইরাসগুলি দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে গবেষকরা দেখেছেন, ‘সার্স’ ভাইরাসে রোগী অনেক বেশি কাহিল হয়ে পড়েন কোভিড-১৯ ভাইরাসের হানাদারির চেয়ে। সার্স ভাইরাসে প্রতি ১০ জন আক্রান্তের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু কোভিডের ক্ষেত্রে সেই মৃত্যুর হার কম। আবার কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত অনেক সময় বুঝেই উঠতে পারেন না তিনি আক্রান্ত হয়ে‌ছেন। এটা সার্স বা মার্স ভাইরাসের ক্ষেত্রে হয় না।
৩) কোভিড-১৯ ভাইরাসের আক্রমণে মৃত্যু হয় কেন?
সাধারণত, এই ভাইরাস আমাদের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। সেটা তখনই হয় যখন এই ভাইরাস শ্বাসনালী ধরে নেমে ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। সাধারণ কোষের তুলনায় ফুসফুসের কোষে এসি-২ রিসেপ্টর কোষের সংখ্যা বেশি। কোভিড-১৯-এর জন্য ফুসফুসের অনেক কোষ নষ্ট হয়ে যায়। অনেক কোষ ভেঙে যায়। ফলে, ফুসফুস ভরে যায় ভাঙা কোষে। তখন আক্রান্তকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখতে হয়।
কখনও কখনও অবস্থা আরও খারাপ দিকে যায়। আমাদের দেহের প্রতিরোধী ব্যবস্থা ফুসফুসের কোষগুলিকে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়তে উৎসাহিত করে। তার ফলে, প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এই কাজে দেহের প্রতিরোধ কোষগুলি আরও বেশি সংখ্যায় জড়িয়ে পড়লে প্রদাহ আরও বেড়ে যায়। এটাকেই বলা হয়, ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’।
তবে এই সাইটোকাইন স্টর্ম কেন সব আক্রান্তের না হয়ে কারও কারও ক্ষেত্রে হয়, তার কারণ জানা যায়নি।
৪) কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে আমাদের জীবন কী সুরক্ষিত?
কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যাঁরা পরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে তাঁদের শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরালো হয়ে উঠেছে। তার ফলে, রক্তে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। যারা শরীরে ঢোকা ভাইরাসকে রুখে দিতে পারছে বা তার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারছে। তাতে ভাইরাসগুলি আর কোষকে ভেঙে দিতে পারছে না।
তবে ভাইরোলজিস্টদের কেউ কেউ মনে করেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের দেহের প্রতিরোধক্ষমতার মেয়াদ বড়জোর এক বা দু’বছর। তাঁদের বক্তব্য, কোভিড-১৯-ও অন্য করোনাভাইরাসের মতোই। ফলে, আগামী দিনে বহু মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তা ফের মহামারীর চেহারা নিতে পারে। ‘‘তবে সে ক্ষেত্রে হয়তো এই ভাইরাস এতটা ভয়ের কারণ হয়ে উঠবে না’’, বলছেন লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের ভাইরোলজিস্ট মাইক স্কিনার।
৫) কোভিড-১৯-এর টিকা বেরবে কত দিনে?  
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায় জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে বিশ্বে মোট ৭৮টি টিকা নিয়ে হিউম্যান ট্রায়াল শুরুর কথা ভাবা হয়েছে। আরও ৩৭টি টিকা বেরনোর অপেক্ষায়। এমনই একটি টিকা নিয়ে এখন ফেজ-ওয়ান ট্রায়াল শুরু করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। এমন ট্রায়াল চলছে মার্কিন বায়োটেকনোলজি কর্পোরেশনের বানানো দু’টি টিকা নিয়ে। চিনা গবেষকরাও এমন তিনটি টিকা নিয়ে ফেজ-ওয়ান ট্রায়াল শুরু করেছেন। তবে তাতেও আগামী বছরের আগে কোভিড-১৯-এর টিকা বাজারে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, টিকা বাজারে আনার আগে নানা দফায় প্রচুর মানুষের উপর তার হিউম্যান ট্রায়াল চলে। সেটা যত বেশি সম্ভব মানুষের উপর চালানো যায়, ততই মঙ্গল। কিন্তু এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকলকে চলতে হচ্ছে বলে সেটা করার ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে।

Written and Edited By
Md Zahirul Haque,AI News Correspondent (USA) & Freelance Journalist
REF: Different News articles