অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না শ্রম বিক্রির আশায় বসে থাকা এই মানুষগুলোর। ৩০ জুন সকালে রংপুর নগরের শিমুলবাগ এলাকায়। ছবি: মঈনুল ইসলাম
রংপুর নগরের বেতপট্টি চারমাথা মোড় থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে দর্শনা ভুরারঘাট। সেখান থেকে সাইকেল চালিয়ে এসেছেন দিনমজুর কবির মিয়া। সকাল ১০টা পেরোলেও নিরাশ মুখে বসে ছিলেন। রাস্তার চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি। রিকশা কিংবা মোটরসাইকেলে কেউ এলেই নড়েচড়ে বসেন। কিন্তু যখন জানতে পারেন, শ্রমিক ডাকতে নয়, অন্য কোনো কাজে এসেছেন, তখন মুখ যেন ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে।
কবির মিয়া বলেন, ‘কী যে একটা ভাইরাস রোগ আসিল, বাহে, হামারগুলার দাম নাই। আগোত কত ডাক আসছিল। এলা সকাল থাকি অনেক বেলা হয়া গেইলেও একটা কাম জোটে না।’
৩০ জুন বেতপট্টি চারমাথা মোড়ের ওই স্থানটায় কবির মিয়ার মতো জনা পঞ্চাশেক দিনমজুরের জটলা ছিল। প্রতিদিনই সকাল আটটার মধ্যে এই স্থানে চলে আসেন কাজের সন্ধানে। কোনো দিন কাজ জোটে, কোনো দিন কাজ পাওয়া যায় না। করোনাভাইরাসের সময় বলে এই অবস্থা। অথচ স্বাভাবিক সময়ে সকাল নয়টার মধ্যেই স্থানটা ফাঁকা হয়ে যায়।
কাজ না পেলে সংসার কীভাবে চলে, এমন প্রশ্ন করতেই জটলা থেকে ভেসে এল জাহেদুল ইসলামের গলা। ডালা-খন্তা হাতে চেপে ধরে বলে উঠলেন, ‘আল্লায় চালায়, বাহে।’ অপর দিনমজুর আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কাইল (গতকাল) রাইতোত ভাত খাই নাই। খাওয়াইয়া চারজন। কোনো দিন কাম পাওয়া গেইলেও ৫০০ টাকার মজুরি ২০০ টাকাও পাওয়া যায় না। এই করোনাভাইরাস হয়া হামারগুলার দাম একেবারে কমি গেইছে, বাহে।’
বেলা বাড়ছিল আর শ্রমজীবী মানুষগুলোর চোখমুখে বিষণ্নতার ছাপ স্পষ্ট হচ্ছিল। একসময় মানুষের কোলাহল বাড়তে থাকে। কাজ না পেয়ে শ্রমজীবী অধিকাংশ মানুষ হতাশ হয়ে ফিরে যান। ওদিকে ব্যবসাপ্রধান বেতপট্টি এলাকার দোকানপাট একে একে খুলছিল। একপাশে কাপড়ের দোকান, অন্যপাশে হার্ডওয়্যার সামগ্রীর দোকান। স্যানিটারি সামগ্রীর কিছু দোকানও রয়েছে। রয়েছে হরেক রকম পণ্যের দোকানও। দোকানের কর্মচারীরা কেউ বসে আছেন, কেউবা পায়চারি করছেন। দিনমজুরদের মতো তাঁরাও তাকিয়ে থাকেন রাস্তার দিকে, কোনো খদ্দের আসে কি না।
চারমাথা মোড় থেকে একটু এগিয়ে দেখা মিলল আনিসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্সের একটি শোরুমের এজেন্ট। করোনাকালের ব্যবসার হালহকিকত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে, ভাই। প্রতি মাসে ঘরভাড়া ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। তার সঙ্গে রয়েছে বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীদের বেতন। এখন দোকান খুললেও দিনের এক বেলায় পাঁচ-ছয় হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয় না। এমনও দিন যাচ্ছে, একটি টাকারও বিক্রি নেই। এভাবে কি ব্যবসা চলে?’
কিছুটা সামনেই ক্রিসেন্ট স্যানিটারি নামে একটি দোকান। মালিক সুব্রত সান্যাল দোকানেই ছিলেন। কেমন চলছে ব্যবসা, জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলেন, ‘কেমন আর চলবে? আপনারাই (সাংবাদিক) ভালো বলতে পারেন। ঘুরে ঘুরে দেখুন। সবার কষ্টটা বুঝতে পারবেন। বেচাবিক্রি একদম নেই। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করাও সম্ভব নয়। ব্যবসা লাটে উঠবে।’
সংক্রমণ বাড়ছে, প্রচারণায় কাজ হচ্ছে না
স্বাস্থ্য বিভাগের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রংপুর জেলায় করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। পুলিশ, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, ব্যাংক কর্মীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষই করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন। গত এপ্রিল-মে এই দুই মাসে রংপুর জেলায় করোনা শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৪১১। সেখানে শুধু জুন মাসেই করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫০৫ জনের।
সরেজমিনে নগরের সিটি বাজারের সামনে মানুষের জটলা, পায়রা চত্বর, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট মোড়, জাহাজ কোম্পানী মোড়, হাঁড়িপট্টি এলাকাসহ ব্যবসাপ্রধান এলাকায় দেখা গেল মানুষের চলাফেরায় সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। একে অপরকে ধাক্কাধাক্কি করে চলছে হাঁটাচলা। সবখানে ঠাসাঠাসি, লাগালাগি অবস্থা।
পুলিশ ভ্যান থেকে ভেসে আসছিল মাইকের আওয়াজ। তাতে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছিল। তাতে যেন কারোরই গা নেই। আশপাশে থাকা অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। পায়রা চত্বর মোড়ে এক নারীকে দেখা গেল দুই সন্তানের হাত ধরে রাস্তায় হাঁটছেন। কারও মুখে মাস্ক নেই। ওই নারী বলেন, বাচ্চারা মুখে মাস্ক দিতে চায় না। নাকে সুড়সুড়ি লাগে। তাই মাস্ক এইমাত্র মুখ থেকে খুলে হাতে নিয়েছে।
একটু এগোতেই জেলা মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়। সেখান থেকেও মাইকযোগে অনবরত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছিল। তবে ‘কে শোনে কার কথা। মনে হয় যেন করোনাকে মানুষ জয় করে ফেলেছে। একটু সচেতন হলেই সবার জন্য যে মঙ্গল হয়, তা তাদের মাথায় যেন চিন্তায় নেই।’ মুখে মাস্ক পরে থাকা মিজানুর রহমান পথ চলতে চলতে বলছিলেন কথাগুলো।
ক্রেতা আসে না। তাই রেস্তোরাঁ ব্যবসায় নেমেছে ধস। ৩০ জুন সকালে রংপুর নগরের ধাপ এলাকার মেডিকেল মোড়ে। ছবি: মঈনুল ইসলাম
রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ধস, ক্রেতা নেই মার্কেটে
রংপুরে তিন মাসের বেশি সময় ধরে পুরোদমে হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ। শত শত হোটেল কর্মচারীরাও বেকার হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ রিকশা চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে স্বল্প পরিসরে কিছু রেস্তোরাঁ খুলছে। আদালতপাড়া কাচারি বাজারে বড় দুটি হোটেল-রেস্তোরাঁর মধ্যে মৌবন এখনো বন্ধ। এক সপ্তাহ হলো খুলেছে স্টার হোটেল। সরেজমিনে দেখা যায়, স্টারে মাত্র চারজন ক্রেতা। তাঁরা বসে চা পান করছেন। তাঁদের একজন সবুজ মিয়া বলেন, ‘যে অবস্থা, তাতে হোটেলে ঢুকতে ভয় লাগে। করোনার সময় এই প্রথম আমি হোটেলে এসেছি।’
স্টার হোটেলের স্বত্বাধিকারী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘দোকান খুললেই চার-পাঁচ হাজার টাকার ক্ষতি। তারপরও খুলছি এই আশায় যে আস্তে আস্তে দোকানটা চালু হোক।’ তিনি আরও বলেন, দোকানের মাসিক ভাড়া ৫০ হাজার টাকা। সাড়ে তিন মাস দোকান বন্ধ ছিল। ৫২ জন কর্মচারীর মধ্যে এখন ১৪ জনকে দিয়ে হোটেল খুলেছেন। বাকি কর্মচারীদের কী হবে? নুরুলের জবাব, ‘আমারই জীবন চলে না। জমানো টাকা বের করে এনে দোকান চালাতে হচ্ছে। এতে পুঁজি শেষ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।’
রংপুর টাউন হলের সামনে চায়ের স্টল ছিল রেজাউল ইসলামের। ক্রেতার অভাবে দোকান এখন বন্ধ। তিনি বলেন, সংসার চলে না। উপায় না পেয়ে পেশা বদল করেছেন। ২০০ টাকা জমার বিনিময়ে রিকশা চালাচ্ছেন। দিন শেষে ১০০-১৫০ টাকা থাকে। তাই দিয়ে কোনোরকমে চলছে সংসার।
নগরের বিপণিবিতানগুলো খুলেছে। তবে ক্রেতা তেমন একটা নেই। জাহাজ কোম্পানী মোড়ের পাশে মতি প্লাজার দোতলায় ‘পাঞ্জাবিওয়ালা’। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, থরে থরে বাহারি রঙের পাঞ্জাবি সাজানো। কিন্তু একজন ক্রেতাও নেই। মালিকসহ চারজন কর্মচারী বসে মুঠোফোনে চোখ বোলাচ্ছিলেন। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রিপন শেখ বলেন, ‘২০ জন কর্মচারীর মধ্যে মাত্র ৪ জন দিয়ে দোকান খুলে বসেছি। বাকিদের রাখা সম্ভব হয়নি। সুদিন এলে তাঁদের আবার ডাকা হবে।’
একই বিপণিবিতানের নিচতলায় ‘নিউ নাইওরী’ নামের দোকান। এর মালিক শাহিনুর রহমান বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণ নেওয়া আছে। মাসিক কিস্তির টাকা কীভাবে পরিশোধ করব, দুশ্চিন্তায় আছি। আগে দোকানে বিক্রি হতো প্রতিদিন ১০-১৫ হাজার টাকা। এখন কোনো দিন বিক্রিই হয় না। শুধু শুধু দোকান খুলে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই।’
পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে গরু পালন করেছেন অনেক খামারি। এখন বিক্রি না হওয়ায় বিপাকে তাঁরা। ১ জুলাই রংপুর নগরের মাহিগঞ্জ এলাকায়। ছবি: মঈনুল ইসলাম
খামারিদের মাথায় হাত
২ জুলাই রংপুর নগরের বুড়িরহাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর দেশি গরু। কিন্তু ক্রেতা তেমন একটা নেই। কিছু ক্রেতা ঘোরাফেরা করলেও শুধু দাম যাচাই করছেন। গরুর খামারি নাজমুল ইসলাম জানান, এবার ৩৬টি গরু লালন-পালন করেছেন। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে বিক্রির জন্য গরু হাটে তুলেছেন। কিন্তু কেউ দামই করছে না। ব্যাংকঋণ নিয়ে গরু পুষেছেন। গরু বিক্রি না হলে কীভাবে তা শোধ করবেন, সেই চিন্তা মাথায় এলে রাতে ঘুম আসে না।
অপর খামারি হেলাল মিয়া একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে গরু লালন-পালন করেছেন। তাঁর ২৫টি গরু বিক্রির উপযোগী হয়েছে। এসব গরুর মধ্যে কয়েকটি গরু বিক্রির জন্য হাটে এনেছিলেন। কিন্তু ক্রেতার অভাবে একটিও বিক্রি করতে পারেননি। রংপুর জেলার এক হাজারের বেশি গরুর খামারি এবার গরু বিক্রি নিয়ে এমন দুশ্চিন্তায় আছেন।
বুড়িরহাটের ইজারাদার হারুন-অর-রশিদ জানিয়েছেন, এই হাট তিনি ১ কোটি ১২ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন। করোনার কারণে এবার টাকা উঠছে না। তাই পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় দেখছেন না তিনি। মানবিক কারণে ইজারার টাকা কমিয়ে দেওয়ার জন্য সিটি করপোরেশনে পৃথক দুটি আবেদন করেছেন তিনি।
প্রমোদতরি ঘাটে বেঁধে রেখে পর্যটকের জন্য অপেক্ষা। ১ জুলাই কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা রেল ও সড়কসেতু এলাকায়। ছবি: মঈনুল ইসলাম
খাঁ খাঁ করছে বিনোদনকেন্দ্রগুলো
কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা নদীর পারে বিনোদনকেন্দ্রে মানুষের কোলাহল নেই। এখানে বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলোরও দেখা মিলল না। মানুষের অপেক্ষায় নদীর ঘাটে একটি প্রমোদতরি দেখা যায়। তিস্তা রেল ও সড়কসেতুর মাঝখানে নদীর ঘাটে প্রমোদতরিটির ওপর ছাউনি দেওয়া। বসার জন্য কয়েকটি চেয়ার রয়েছে। কিন্তু নেই কোনো বিনোদনপিপাসু মানুষ।
প্রমোদতরির স্বত্বাধিকারী লিটন ইসলাম জানান, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে ঘাটে বসে থাকলেও হাতে গোনা মানুষজন ঘুরতে-ফিরতে এলেও তাঁরা কেউই নৌকায় ওঠেন না। অথচ এখানে দিনভর মানুষের কোলাহল ছিল। এখন একটি টাকাও রোজগার নেই। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছেন।
ঘরবন্দী থাকতে থাকতে শখের বশে কেউ কেউ ছুটে গেছেন সেখানে। জেলার কাউনিয়া উপজেলায় তিস্তাপারে প্রাইভেট কারে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শহর থেকে ছুটে গেছে একটি পরিবার। শফিকুল ইসলাম নামের এই ব্যক্তি বলেন, ‘গাড়ি নিয়ে কয়েকটি স্পটে গিয়েছি, কিন্তু কোথাও তেমন বিনোদন পেলাম না। সবার মনেই যেন আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
নগরের চিকলি বিল বিনোদনকেন্দ্রেও নেই কোনো মানুষ। বিলের পানির মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর জন্য স্পিডবোটগুলো চলছে না। বিলের ইজারাদার মোখলেছুর রহমান বলেন, ঈদ গেল, নববর্ষ গেল, কিন্তু মানুষ এল না। অথচ কতজনের পদচারণেই না এ ঐতিহাসিক বিল মুখর ছিল। করোনার এই মহামারিতে এখানে এখন কেউই ঘুরতে আসছেন না। এই অবস্থায় বিপুল টাকা লোকসান হবে। এটি কাটিয়ে ওঠা আর কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
নগরের চিড়িয়াখানাও বন্ধ। দল বেঁধে কয়েকজন তরুণ বন্ধু ঘুরতে এলেও তাঁদের বাইরে থেকে ফিরে যেতে দেখা গেল। সুজয় বর্মণ নামের এক তরুণ বলেন, চিড়িয়াখানার সামনে কী যে ভুতুড়ে পরিবেশ! এমনটি হবে কেউ কি কখনো ভেবেছে? কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই গাছগাছালির মধ্যে পাখির কলকাকলি ও কিচিরমিচির শব্দে একটা অচেনা পরিবেশ। খাঁচায় বন্দী পশুপাখিগুলো হঠাৎ মানুষ দেখে আঁতকে উঠছে। অন্যদিকে প্রত্নতত্ত্বের স্থান তাজহাট জমিদারবাড়িও বিনোদনের জন্য বন্ধ। এ ছাড়া বিনোদনের বড় কেন্দ্র ভিন্নজগতের কয়েক একর এলাকাজুড়ে এলাকাটি যেন সুনসান পরিবেশ।
তিন চাকার যানে দুর্দশা
সিটি করপোরেশনের হিসাবে রংপুর নগরে ২০ হাজার চার্জার ও অটোরিকশার মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১ হাজারের মতো চলাচল করছে। নগরের রাস্তায় রিকশা ও অটোরিকশার কারণে হাঁটাচলা ছিল কষ্টকর। নিত্যসময় লেগে থাকত যানজট। সেই অবস্থা এখন আর নেই। করোনা সব পাল্টে দিয়েছে। গত ১ জুন দুপুর ১২টার দিকে নগরের জাহাজ কোম্পানী মোড়ে সামান্য কয়েকটি অটো চোখে পড়ল। যাত্রী নেই। তার ওপর প্রতি অটোতে তিনজন ও চার্জার রিকশায় একজনের বেশি যাত্রী তোলা নিষেধ।
লাল মিয়া ৩ মাস আগে কিস্তিতে ৬০ হাজার টাকায় একটি চার্জার রিকশা কিনেছেন। প্রথমে ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। বাকি ৩০ হাজার টাকা ৩ মাসের মধ্যে দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘এখন শহরোত মানুষ খুব কম। তার ওপর বিকাল হইতে গাড়ি বন্ধ। দিনে ২০০ টাকাও আয় হয় না। এই টাকা দিয়া কিস্তির টাকা কেমন করি শোধ করমো চিন্তা করলে ঘুম আইসে না।’ অটোচালক গোলাপ হোসেন বলেন, ‘ভাড়ায় নিয়া গাড়ি চালাই। দিন শেষোত ৩০০ টাকা জমা দিতে হবে। সেই টাকা তোলা নিয়া হিমশিম অবস্থা। সারা দিন খাটনি করিয়া ১৫০ টাকা থাকে। এই সামান্য কয় টাকা দিয়া কি সংসার চলে?’
ফুলের ব্যবসাতেও মন্দা
নগরের পুলিশ লাইনস স্কুল ও কলেজ রোডে সারি সারি ফুলের দোকানে শুধু নানা রঙের ফুল শোভা পাচ্ছে। প্রতিটি দোকানের সামনে মালিক-কর্মচারীরা দাঁড়িয়ে থাকেন ক্রেতা কিংবা পরিচিতজনের অপেক্ষায়। কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই।
ফুল কর্নারের স্বত্বাধিকারী হাফিজুল বাবু ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি পদে আছেন। আগে রমরমা ব্যবসা করেছেন। এখন কেউই ফুল কিনতে আসে না। বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিয়েবাড়ি সাজানোর জন্য একটা-দুটো অর্ডার আসে। তবে টাকার পরিমাণ খুবই সামান্য। ৫০০ টাকার মতো। আগে এ ধরনের অর্ডারে পাঁচ হাজার টাকার মতো পাওয়া যেত। তাও সপ্তাহের ওই দুই দিন হাতে কিছু আসে। বাকি দিনগুলো হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়।
ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফিরোজ শাহ বলেন, এখানে ১৭ জন ফুল ব্যবসায়ীর ২০টি ফুলের বাগান রয়েছে। বর্তমানে বাগান পরিচর্যাও হচ্ছে না। বাগানে ৩০ জনের মতো শ্রমিক লাগে। তাঁদের টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই বাগানের ফুল বাগানেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
No comments:
Post a Comment