Wednesday, January 1, 2020

খেলার মধ্য দিয়ে শিশুদের পড়ালেখা শেখাতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

গণভবনে মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের       হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সারাক্ষণ শুধু পড় পড় করলে ছোট ছেলেমেয়েদের ভালো লাগে না। খেলাধুলার মধ্য দিয়ে তাদের পড়ালেখা শেখাতে হবে। তবেই সেটা ফলপ্রসূ হবে।’

গণভবনে মঙ্গলবার সারা দেশে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। এদিন তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
একই অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ বছরের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খেলাধুলার মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করবেন। এখন আমরা সাড়ে তিন হাজার ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিয়েছি।’ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরির প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নতুন প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে তুলতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে চাই। যাতে তারা পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে। এ কথা মাথায় রেখেই আমাদের সরকার শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক মানোন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শিক্ষাকে আরও আধুনিক, উন্নত ও বিজ্ঞানসম্মত করতে চাই। শুধু সাধারণ শিক্ষা নয়, কারিগরি শিক্ষাকে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। যাতে একজন ছেলে-মেয়ে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেরা কিছু করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভালো ফল করতে হলে আমাদের শিশুদের আরও মনোযোগী হতে হবে। ভবিষ্যতে যেন ফল আরও ভালো হয়, সেজন্য মন দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গরিব মা-বাবার ওপর যেন চাপ না পড়ে, সেজন্য আমরা বছরের শুরুতেই বই দিচ্ছি। স্কুল ও কলেজ সরকারি করে দিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের যেন নদীনালা, খালবিল পার হতে না হয়, সেটা বিবেচনায় রেখে স্কুল করে দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের বেতন বাড়িয়ে দিয়েছি। উচ্চশিক্ষাসহ সর্বস্তরে বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। স্কুলে টিফিনের ব্যবস্থা করেছি। কোনো শিক্ষার্থী যেন ঝরে না পড়ে, এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হচ্ছে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে শিক্ষার কথা বলা আছে গুরুত্বের সঙ্গে।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের একটা স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। এই দেশটাকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই। উন্নত এবং সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়তে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আমরা এমন একটি সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যেখানে থাকবে না কোনো দরিদ্রতা, বৈষম্য। থাকবে উন্নত সমাজব্যবস্থা।
নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ফল প্রকাশ করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রতিটি পরীক্ষা সময়মতো হবে এবং ফলও সময়মতো হবে। আমরা কোনো সেশনজট রাখব না। সেশনজট থাকলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় অমনোযোগ চলে আসে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। এই প্রয়াসের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা বিনামূল্যে করার পাশাপাশি ৩৬ হাজার প্রাথমিক স্কুল জাতীয়করণ করা হয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা ২৬ হাজার প্রাথমিক স্কুল জাতীয়করণ করেছি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা প্রদান করছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী গঠিত কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ অনুসরণ করে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি।
বই উৎসবে আজ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ২০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর হাতে আজ ৩৫ কোটি ৩১ লাখ ৪৪ হাজার বই তুলে দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতি ১ জানুয়ারি দেশব্যাপী জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব উদযাপনের জন্য প্রস্তুত। বাংলাদেশ জানুয়ারির প্রথমদিন ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষার্থীর মাঝে বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণ করে বিশ্বে নজিরবিহীন উদাহরণ স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, নতুন বই পাওয়ার আনন্দই আলাদা।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রধানমন্ত্রীর নবনিযুক্ত মুখ্য সচিব ড. আহমাদ কায়কাউস, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিভাগের বিদায়ী সচিব মো. সোহরাব হোসেইন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

No comments:

Post a Comment